মায়ের ভালোবাসা ৬০০ কিলোমিটারের দূরত্বকেও হার মানায়
প্রতিদিন আকাশপথে অফিসে যান মালয়েশিয়ার ‘সুপার কমিউটার’ রেচেল
সিনিয়র প্রতিবেদক
| Published: Saturday, November 29, 2025
কর্মজীবন ও পরিবার—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হলেও মালয়েশিয়ার এক নারী প্রতিদিন যে ত্যাগ স্বীকার করেন, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। এয়ারএশিয়ার ফাইন্যান্স অপারেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার রেচেল কৌর জেট সিং প্রতিদিন ৬০০ কিলোমিটার আকাশপথে যাতায়াত করেন। এই রুটিনের কারণেই সহকর্মীরা তাকে বলেন প্রকৃত ‘সুপার কমিউটার’।
প্রতিদিন ভোররাতেই শুরু হয় রেচেলের দিন। “আমি সাধারণত সকাল ৪টা ১০ বা ১৫ মিনিটের মধ্যে উঠে যাই,” জানান তিনি। সকাল ৫টার মধ্যে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে ধীরগতিতে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছান পেনাং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ৫টা ৫৫ মিনিটে বোর্ডিং, আর এর ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই তিনি পৌঁছে যান কুয়ালালামপুরে। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি অফিসে হাজির।
তবে এই কঠোর রুটিন তার জীবনে সবসময় ছিল না। একসময় তিনি কুয়ালালামপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবারে ফিরতেন। কিন্তু দুই সন্তানের (একজন ১২, অন্যজন ১১ বছর বয়সী) বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় তার সিদ্ধান্ত।
“ওদের বড় হওয়ার সময় প্রতিদিন মায়ের পাশে থাকা দরকার,” বলেন রেচেল। “এভাবে যাতায়াত করলে প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরতে পারি, ওদের সাথে সময় কাটাতে পারি, হোমওয়ার্কে সাহায্য করতে পারি।”
নিজের যাতায়াত খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়, তবে এয়ারএশিয়ার কর্মী হওয়ায় তিনি পান বিশেষ ছাড়। “প্রতিদিন রিটার্ন টিকিট মাত্র ৫০ রিংগিত (প্রায় ১১ ডলার বা ১,৩৪০ টাকা) লাগে,” বলেন তিনি। কুয়ালালামপুরে ভাড়া ও খাবারের খরচ বাদ দিলে এটি তার জন্য বেশি সাশ্রয়ী। “আগে বাসাভাড়া দিতাম ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ রিংগিত। এখন শুধু বাড়ির মর্টগেজ, যা ১,০০০ রিংগিতের মতো,” তিনি যোগ করেন।
অফিসটি সেপাংয়ে হওয়ায় কুয়ালালামপুরের ভেতর থেকেও অফিসে যেতে অনেকের ১.৫ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। এ কারণে রেচেলের এয়ার যাত্রা মোট সময়ে প্রায় একই হয়ে দাঁড়ায়। তাই একে তিনি ‘সময়ের সমানুপাতিক বিনিয়োগ’ হিসেবে দেখেন।
আকাশপথের অল্প সময়টুকুই রেচেলের নিজের জন্য শান্তির মুহূর্ত। “প্রথম ১০-১৫ মিনিট প্রার্থনা ও আত্মচিন্তায় কাটাই। এরপর গানের সঙ্গে জানালার বাইরে প্রকৃতি দেখি,” বলেন তিনি।
দিন শেষে দ্বিতীয় ফ্লাইটে করে তিনি ফিরেন পেনাংয়ে, সাধারণত সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের মধ্যে তিনি বাড়ি পৌঁছান। উৎসবের মৌসুমে কখনো আসন পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও পরিবারকে দেখার আনন্দ সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
“প্রতিদিন ভোর ৪টায় উঠা খুবই ক্লান্তিকর,” স্বীকার করেন রেচেল। “কিন্তু বাড়ি পৌঁছে সন্তানদের দেখার পর সব ক্লান্তি মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়।”
রেচেলের এই জীবনের গল্প প্রমাণ করে—ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর অটুট মনোবল মানুষকে কত দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। তার দৈনন্দিন ফ্লাইট শুধুই যাতায়াত নয়; এটি এক মায়ের ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ, যা দূরত্বকে হার মানায়।
Make Comment
Login to CommentPopular News
Subscribe to News Letter
Latest News
Weather Outlook
Clear
Dhaka, Bangladesh
Wind: 7.2 kmph · Precip: 0 mm · Pressure: 1015 mb
21.2°C
Mon
21.6°C
Tue
21.6°C
Wed
21.6°C