অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়ার যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেটি এখন জার্মানি থেকে আসছে। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা’ দেখা দেওয়ায় কাতার সরকার বিকল্প উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই বিকল্প উড়োজাহাজ পাঠানো হচ্ছে জার্মানি থেকে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় এভিয়েশন এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক বক্তব্যে ঢাকাস্থ কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ বলেন— “কাতার সরকার একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিচ্ছে, এবং এটি জার্মানি থেকে ঢাকায় আসবে”।

তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল টিমের সুপারিশ অনুযায়ী উড়োজাহাজ পাঠানো হবে। পাশাপাশি, চূড়ান্ত মেডিক্যাল ক্লিয়ারেন্স পেতে আরও চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। এই প্রক্রিয়ায় কাতার দূতাবাস ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।

ব্যবহৃত হবে জার্মানির CL60 এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

বিকল্প হিসেবে যে উড়োজাহাজটি আসবে, সেটি বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ (CL60)—যা পরিচালনা করে এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ। এই সংস্থাটি জার্মানির অন্যতম শীর্ষ বৈশ্বিক এয়ার-অ্যাম্বুলেন্স ও মিশন-ক্রিটিক্যাল এভিয়েশন সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

বোম্বার্ডিয়ার সিরিজের লং-রেঞ্জ বিজনেস জেটগুলো সাধারণত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন বা দূরপাল্লার রোগী পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। চ্যালেঞ্জার ৬০৪ মডেলটি আন্তমহাদেশীয় ফ্লাইট চালাতে সক্ষম হওয়ায় ঢাকা–লন্ডন মেডিক্যাল ট্রান্সপোর্টের জন্য উপযোগী বলে বিবেচিত হচ্ছে।

এখনো ঢাকায় অবতরণের অনুমতি চাওয়া হয়নি

কূটনৈতিক সমন্বয় চললেও উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন এখনো করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (CAAB) এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

আজ সকালে এভিয়েশন এক্সপ্রেসকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইট শিডিউল, ল্যান্ডিং রিকোয়েস্ট বা পূর্ব নোটিফিকেশন, কোনোটিই এখনো সিভিল এভিয়েশন বা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে জমা দেওয়া হয়নি।

কর্তৃপক্ষ জানান, মেডিক্যাল ইভাকুয়েশনের ক্ষেত্রে এসব অনুমতি আবশ্যক। এখনো যেহেতু আবেদন আসেনি, তাই আপাতত বিমানবন্দরে কোনো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল উইং এ বিষয়ে কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, তবে উড়োজাহাজটি আসবে তৃতীয় দেশ জার্মানি থেকে—যা কাতারের আয়োজনে সম্পন্ন হচ্ছে।

প্রযুক্তিগত সমস্যায় পরিকল্পনায় বিলম্ব—বিএনপির নিশ্চিতকরণ

শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানান যে পূর্বনির্ধারিত কাতারি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছাতে না পারায় মেডিক্যাল ট্রান্সফার বিলম্বিত হয়েছে।

তিনি বলেন, উড়োজাহাজটিতে টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিয়েছে, এবং সমস্যা দ্রুত সমাধান হলে শনিবারই এটি পৌঁছাতে পারে।

মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যদি ভ্রমণের জন্য ফিট হন এবং মেডিক্যাল বোর্ড অনুমোদন দেয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ, ৭ তারিখ (রবিবার) তিনি বিমানে উঠবেন।”

পরিবারের সদস্য ঢাকায় পৌঁছেছেন

বিএনপি চেয়ারপার্সনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘিরে উদ্বেগ বাড়তে থাকলে শুক্রবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান তারেক রহমানের স্ত্রী ও খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান।

দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার কাতার দূতাবাসে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেয়ার অনুরোধ জানায়।

এর জবাবে কাতার সরকার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং নিশ্চিত করে যে মেডিক্যাল টিম ভ্রমণের অনুমতি দিলেই জার্মান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হবে।

অন্যদিকে বিএনপিও পৃথকভাবে কাতার দূতাবাসে যোগাযোগ করে লন্ডন ট্রান্সফারের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তার আবেদন করে।

অনুমোদন, মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স সহ সবকিছুই এখনো প্রক্রিয়াধীন। তাই খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যেতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির পরবর্তী অগ্রগতি নির্ভর করবে চিকিৎসক দলের মূল্যায়ন, কাতারের লজিস্টিক ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের ওপর।